বগুড়া কারাগারে হার্ট এ্যাটাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সিরিয়াল মৃত্যু নানামুখি প্রশ্ন
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ পিএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ পিএম
গত একমাসে বগুড়ায় কারা হেফাজতে থাকা আওয়ামী লীগের চার নেতার মৃত্যুর পর ফের হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন সদ্য গ্রেফতার আরও এক শীর্ষ নেতা। এর আগে যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে যা তারা সকলেই হার্ট এ্যটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বগুড়ার কারা কর্তৃপক্ষ ও মরহুম নেতাদের স্বজনরা।
গ্রেফতারকৃত লীগ নেতারা সবাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এবার বগুড়ায় হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন সদ্য গ্রেফতার হওয়া সাবেক সাংসদ (বগুড়া-৬) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানাগেছে । এর আগে, বগুড়ার কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে গত বুধবার সন্ধ্যায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঐদিন রাতেই ঢাকায় নেওয়া হয় বলে জানান বগুড়ার জেল সুপার ফারুক আহমেদ। সাবেক এমপি রিপু গত ১৮ ডিসেম্বর রাত একটার দিকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার হন।
এদিকে, পুর্বেই বগুড়ার জেলে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু ও হার্ট এ্যাটাকে অসুস্থতা নিয়ে পলাতক লীগ নেতাদের পরিবার পরিজনের মধ্যে নানাবিধ শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বগুড়ার একাধিক নেতাকর্মী গোপনে জানান, জেলে আসলে কি হচ্ছে তারা তা জানতে পারছেন না। এভাবে নেতাকর্মীর মৃত্যু সবার মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করছে। তাদের প্রশ্ন নেতাদের মৃত্যু কী অস্বাভাবিক কী না ? বগুড়া কারাগারে গেলেই হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে কেন ? সম্প্রতি বগুড়া কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেন নি। আশপাশে জেল পুলিশ থাকায় তারা কিছু একটা গোপন করেন। তবে তারা বলেন, বগুড়ার জেলে আওয়ামী লীগের কেউ ভালো নেই।
বগুড়া আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এমপি রিপুর এক ঘনিষ্ঠ স্বজন বলেন, বছর দশেক আগে আগে রিপুর হার্টের সমস্যা হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি সুস্থই ছিলেন। তাকে গ্রেফতারের পর আবার শুনলাম তার হার্টের সমস্যা হয়েছে। তবে প্রশাসনিক কড়াকড়ি কারণে তারা রোগীর সঠিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেও পারছেননা। জানতে চাইলে বগুড়ার জেল সুপার ফারুক আহম্মেদ বলেন, কারাগারে বুকের ব্যথা অনুভব করছিলেন রিপু। তাকে সংগে সংগেই দ্রুত চিকিৎসার সব ব্যবস্থায় নেওয়া হয়। একজন কারাবন্দী হিসেবে প্রাপ্যা সব সুবিধায় পেয়েছেন তিনি। এসব অসুস্থতা নিয়ে রহস্য করা বা প্রশ্ন করা শুভ চিন্তার লক্ষ্মণ নয়।
ঘটনা প্রবাহ অনুযায়ি এর আগে, গত ৯ ডিসেম্বর সকালে আব্দুল মতিন মিঠু নামে বগুড়া কারা হেফাজতে থাকা আওয়ামী লীগের এক নেতা মারা যান। হার্ট এ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মিঠু বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। সেইসাথে তিনি একই উপজেলার দূর্গাহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গত ৩ নভেম্বর একটি হত্যা ও বিষ্ফোরক মামলায় মিঠুকে গ্রেপ্তার করে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শাহাদাৎ আলম ঝুনু কারা হেফাজতে মারা যান। গত ২৪ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ২৬ নভেম্বর বেলা পৌনে ১২ টার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন ঝুনু। ওই সময় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ( শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা নেওয়ার পথে সিরাজগঞ্জে তার মৃত্যু হয়
গত ২৫ নভেম্বর সকালে কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ মারা যান হার্ট এ্যাটাকে । তিনি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর আব্দুল লতিফ জেলা কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঐদিনই শজিমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়
গত ১১ নভেম্বর বগুড়া কারাগারে অসুস্থ হয়ে মারা যান আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম। তিনি বগুড়া শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। হার্ট অ্যাটাকে এ চারজনের মৃত্যু হয় বলে জানায় জেল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে কয়েকজ সমাজসেবী এবং মনোরোগ চিকিৎসকের সংগে কথা বললে তারা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের নেত্রীর পলায়ন ও সরকারের পতনের বিষয়টি মানতে পারছেননা। ২০৪১ পর্যন্ত দল ক্ষমতায় থাকবে, নেত্রী বা তাদের ভাষায় আপা সবকিছু ঠিকই ম্যানেজ করে নিবেন এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হওয়া তাদের জন্য কঠিন। ফলে কারাগারের জীবন তাদেরকে ট্রমাটাইজডকরে রেখেছে। কারাবন্দীরা হয়তো তাদেরকে হেয় প্রতিপন্নমুলক আচরণ করে। এতদিন তারা দেখেছেন সবাই তাদের হুজুর হুজুর করতো। এখন তার বৈপরিত্যমূলক ব্যবহার তারা মানতে পারছেননা এটাই হয়তো তাদের অসুস্থতার বড়ো একটা কারণ।
বিভাগ : রাজনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা
সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা
ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে
দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন
কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম
জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা
ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক
সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা
শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ
ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক
টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস
বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র : জাতীয় নাগরিক কমিটি
সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন
ফেসবুকে কাকে ননসেন্স বললেন শবনম বুবলী
বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় আবারো প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যাপক সাইদুর
পানির ট্যাংকে লুকিয়ে ছিলেন আ. লীগের ‘ভাইরাল নেত্রী’ কাবেরী
সাঁথিয়ায় করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন কৃষিশ্রমিক নিহত, আহত ৫
ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না নয়াদিল্লি: দ্য হিন্দু
যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক সামুদ্রিক ঢেউ ও টর্নেডোর আঘাত, এক জনের মৃত্যু